ব্লগারদের পর এবার সরকারপন্থী আলেমদের টার্গেট করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।
হামলার শিকার আওয়ামী ওলামা লীগের (একাংশ) সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী শনিবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমার শক্ত অবস্থান রয়েছে। বিভিন্ন সময় আমি তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছি। আর এ সব কারণে আমি তাদের শত্রু। তাই তারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই তারা বিভিন্নভাবে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। হুমকির পর থেকে সাবধানে চলছিলাম। কিন্তু তারা হঠাৎ করে আমার ওপর হামলা চালায়।’
ইলিয়াস হোসাইন আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষে আমার সংগঠন সব সময় মাঠে ছিল। আর কোনো আলেম-ওলামা সংগঠন আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিল না। সন্ত্রাসীরা মনে করে, যারা আওয়ামী লীগ করে তারা সবাই নাস্তিক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যার যার ধর্ম সে সে পালন করবেন। এতে বাধার কিছু নেই। কিন্তু কেউ কেউ এটা মানতে পারেন না। এ কারণেই তারা আমাদের মতো আলেমদের হত্যার টার্গেট করেছেন।’
আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেন শনিবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষে যে সব আলেম-ওলামা সক্রিয় তাদের বিপক্ষে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে। হত্যার মিশনে নেমেছে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
এ বিষয়ে শোলাকিয়া মসজিদের খতিব ও সরকারপন্থী আলেম হিসেবে পরিচিত মাওলানা ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ শনিবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ইলিয়াস বিন হেলালী সাহেব বিভিন্ন সময় হেফাজত ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা ও কর্মসূচি পালন করেছেন। সে সব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর হামলা চালাতে পারে। তবে নাও হতে পারে। অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। সেটি তদন্ত করে বের করতে হবে। কারণ আমিও হেফাজত ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রচুর কথা বলেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সংগঠন আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়নি।’
শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালীর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। হামলায়
জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদ মুজাহিদ (২০) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মুজাহিদ নিজেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে ডিবির উপ-কমিশনার মাহবুবুল আলম শনিবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘মুজাহিদ নিজেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করেছেন। হত্যার উদ্দেশ্যেই ওলামা লীগের সভাপতি হেলালীর ওপর হামলা করা হয়েছে।’
তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মুজাহিদ জানিয়েছেন, যারা ব্লগে ইসলামবিরোধী লেখালেখি করেন তারা যেমন ‘নাস্তিক’, ঠিক তেমনি যে সব আলেম-ওলামা ইসলামের নামে হেফাজত, আনসারুল্লাহ এবং ইসলামবিরোধী কথা বলেন তারাও নাস্তিক। এ কারণেই আনসারুল্লাহর সদস্যরা তাদের হত্যার টার্গেট করেছে।’
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মুজাহিদ জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন। আমরা তাদের যাচাই-বাছাই করছি। তাদেরও আটক করা হবে।’
ডিবি সূত্র জানায়, ব্লগার হত্যাকাণ্ড, মাওলানা ফারুকী ও গোপীবাগের সিক্স মার্ডার এবং ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালীর ওপর হামলা একই সুতায় গাঁথা। প্রতিটি ঘটনায় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বা সংগঠনের হাত রয়েছে।
গত বছরের ২৮ আগস্ট নিজ বাসায় খুন হন চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপক ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী। ফারুকী হত্যার পেছনে ধর্মীয় মতবাদের ভিন্নতাকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ডিবি। এ ঘটনায় মোজাফফর বিন মহসীন নামে একজনকে গ্রেফতারও করে ডিবি। পরে ডিবি দাবি করে- মোজাফফর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অন্যতম নেতা। কিন্তু এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্তার প্রমাণ পায়নি পুলিশ। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
এ ছাড়া ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর গোপীবাগে কথিত পীর ও ইমাম মাহদীর সেনাপতি পরিচয়দানকারী লুৎফর রহমান ফারুক ও তার ছেলে মনির হোসেনসহ ৬ জনকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
সুত্রঃ দ্য রিপোর্ট।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন