Ads (728x90)

ঢাকা: হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন মুহিব। হুমায়ূন আহমেদের ‘কৃষ্ণপক্ষ’র নায়ক। ছিলেন বইয়ের পাতায়, এবার চিত্রনায়ক রিয়াজের বেশে হাঁটা ধরেছেন সিনেমায়। ক্যামেরার সামনে তিনি রুটিন করে হাঁটছেন, হাসছেন, চা খাচ্ছেন, খুনসুঁটিতে মেতে আছেন। কালকেও ছিল শুটিং। মুহিব এলেন পাঁচটা নাগাদ। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। কিন্তু ঠোঁটের কোণায় লেগে আছে সেই চিরচেনা হাসি। বেলকোনিতে বসে চা খাচ্ছেন। এর ফাঁকে কস্টিউমটাও চেঞ্জ করে নিলেন। লাইট রেডি, রেডি ক্যামেরা। তার নায়িকা অরু সেজেগুজে বসে আছেন। ক্যামেরার সামনে দাড়ালেন মুহিব। সব চেক করে ডিরেক্টর ‘অ্যাকশন’ বললেন। চলছে অভিনয়। স্ক্রিপ্টে কথাগুলো জাদু মিশিয়ে উচ্চারণ করছেন মুহিব। হঠাৎ মুহিবের বুকে ব্যথা উঠে। ডিরেক্টর তো হতভম্ব। মুহিব বুকে ব্যথার অ্যাকটিং করছে কেন? এটা তো স্ক্রিপ্টে ছিলোনা! 

মুহিবের ব্যথাটা আসলে অভিনয় নয়, বাস্তব। কয়েক সপ্তাহ ধরেই তার বুকের বামপাশটায় ব্যথাটা বাসা বেধেছে। মুহিব ঘামছেন। পাশের ফ্যানটা ফুল ভলিয়্যুমে চলছে। তবুও শার্টটা ভিজে এসেছে। সহশিল্পী ফেরদৌস, পরিচালক শাওন তাকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। একরত্তি কালক্ষেপণ না করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো। যাবার পথেও মুহিবের মুখে হাসি। নেই কোন কাতরতা। কি নির্ভার! ‘আমার কিছু হয়নি। আমাকে শুধু শুধু হাসপাতালে নিচ্ছেন কেন?’ প্রশ্ন রিয়াজের। 
প্রশ্নটা কান থেকে কান হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ভর্তি করানো হলো ইস্টার্ণ হাসপাতালে। ডাক্তাররা জানালেন অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসা দরকার। অ্যাম্বুলেন্সে নেয়া হলো অ্যাপলো হাসপাতালে। ভর্তি করানো হলো জরুরী বিভাগে। ডাক্তাররা জানালেন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। হার্টে রিং পরানো হলো। দেশের সবগুলো মিডিয়ায় খবর বেরুলো, নায়ক হাসপাতালে।
খবরটা কেউ গায়ে মাখলেন, কেউ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন। এটা আবার খবর হলো? এ আবার নতুন কি! সিনেমায় অভিনয়ের জন্য নায়করা অনেক কিছুই করে। হাসপাতালে হয়তো শুটিং চলছে। নায়কদের অসুখ হতে নেই। হলেও সেরে যায়। এই বিশ্বাসই লালন করে ভক্তরা। 
নায়কদের পর্দার চরিত্রের মতোই আমরা সর্বজয়ী ভাবি। কিন্তু বাস্তবতা হলো নায়করাও মানুষ। তাদের শরীরটা রক্তমাংসে গড়া। তাদের জ্বর হয়, মাথা ব্যথা করে। শরীরে চিমটি দিলে লাগে। এটা আমরা ভুলে যাই হরদম। নায়কের চিকিৎসা চলছে। তিনি এখন অ্যাপোলো হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের পরামর্শক শাহাবুদ্দীন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে আছেন। রিয়াজের বন্ধুও তিনি।
বাংলামেইলকে মঙ্গলবার বিকেলে জানালেন তিনি, ‘ওর হার্টে মোট তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে। এর মধ্যে একটি ব্লকে ইতিমধ্যেই রিং পড়ানো হয়েছে। বাকি দুইটি ব্লকের মধ্যে একটি মাইনর। এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। তবে অন্যটিতে তার শারীরিক অবস্থা বুঝে রিং পরাতে হবে। তিনি এখন শঙ্কা মুক্ত।’
কবে নাগাদ স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, ‘এ ধরণের রোগীর ক্ষেত্রে রিং পড়ানোর ৫-৭দিন পর স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন। তবে শুটিং কিংবা শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কোন কাজ থেকে তাকে অন্তত দেড় মাস দূরে থাকতে হবে।’
সে অর্থে মুহিব সহসাই ‘কৃষ্ণপক্ষ’র সেটে ফিরতে পারছেন না। ডাক্তারের নির্দেশনায় চললে প্রায় দেড়মাস শুটিং বা ভারী কোন কাজ করতে পারছেন না। 
এদিকে, পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন ঘোষনা দিয়েছিলেন, আগামী ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে উপলক্ষে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেয়া হবে। নির্দিষ্ট তারিখে মুক্তি দিতে তিনি হাতে সময় পাবেন আর তেইশদিন। এর মধ্যে ডাবিং থেকে শুরু করে অন্যান্য টেকনিক্যাল কাজগুলো তো আছেই। যদিও এরই মধ্যে আশিভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাকি কাজের বেশিরভাগই দৃশ্যেই মুহিবের শর্ট আছে। 
এ ব্যাপারে ‘কৃষ্ণপক্ষ’র পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন জানালেন, ‘কৃষ্ণপক্ষ টিম অপেক্ষা করছে রিয়াজের ফেরার জন্য। আশা করছি শিগগিরই সুস্থ হয়ে শুটিংয়ে ফিরবেন। তার সুস্থতার জন্য আমরা অপেক্ষা করবো। প্রয়োজনে মুক্তির তারিখ বদলে যাবে।’
ছবিটির সহকারী পরিচালক জুয়েল রানা জানালেন, ‘রিয়াজ ভাইকে ছাড়া বাকি দৃশ্যের শুটিং চলছে। আজও উত্তরায় শুটিং চলছে ‘কৃষ্ণপক্ষ’। রিয়াজ ভাইয়ের শর্টগুলো বাকি রেখে আমরা কাজটা শেষ করতে চাই। এডিটিং, ডাবিংও শেষ করবো। ডাক্তাররা জানিয়েছেন সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তিনি শুটিংয়ে ফিরবেন। পরে তার শুটিং করা হবে। ঠিক সময়েই ছবিটি মুক্তি পাবে আশাকরি।’
উল্লেখ্য, ২৪ সেপ্টম্বর মহরত হয় মেহের আফরোজ শাওন পরিচালিত ‘কৃষ্ণপক্ষ’র। হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারাত করে শুটিং শুরু হয়। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি, ফেরদৌস প্রমুখ।
সুত্রঃ বাংলামেইল 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন