হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন আজ শনিবার। এদিন দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করবেন।
হিন্দু পুরাণ মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাঁদের আরো বিশ্বাস, দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের মাঝে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেন।
দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ উপলক্ষে আজ পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকার শনিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।
এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা বাসস।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে দুদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ এবং মন্দিরের পুকুরে পোনা অবমুক্তকরণ।
এ ছাড়া বিকেল ৪টায় রাজধানীতে বের হবে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল। এর উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত এ সময় উপস্থিত থাকবেন।
দেশে ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীনভাবে পালিত হয় : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীনভাবে পালিত হয়। আবহমানকাল থেকে এ দেশের সব ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীনভাবে পালিত হয়। আবহমানকাল থেকে এ দেশের সব ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে।
রাষ্ট্রপতি সমাজে বিদ্যমান ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে তা জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে কাজে লাগানোর জন্য দেশের সব ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। ‘শ্রীকৃষ্ণের জন্ম দিবস’ উপলক্ষে আজ শুক্রবার এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, মানবপ্রেমের প্রতীক শ্রীকৃষ্ণের ভাবধারা ও আদর্শ ছিল সমাজ থেকে হানাহানি দূর করে মানুষে মানুষে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলা। তিনি (শ্রীকৃষ্ণ) সর্বদা মানবতার মুক্তির পথ খুঁজেছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা ও আরাধনার মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির আবহ সৃজনে তাঁর আদর্শ সমভাবে প্রযোজ্য।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তিনি আজ শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তিনি আজ শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যুগ যুগ ধরে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। তিনি বলেন, শ্রীকৃষ্ণ আজীবন শান্তি, মানবপ্রেম ও ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন। তিনি তাঁর জীবনাচরণ এবং কর্মের মধ্য দিয়ে সত্য ও সুন্দরের আরাধনা করেছেন। তিনি বলেন, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা বাঙালির হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে তাঁর ভক্তদের অনুপ্রাণিত করবে।
বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ : খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করে আসছে। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সম-অধিকারে বিশ্বাসী।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করে আসছে। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সম-অধিকারে বিশ্বাসী।’
হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, বৈষম্য, অন্যায়-অবিচার দূর করে সমাজকে শান্তিময় করে তুলতে যার যার অবস্থানে থেকে সবাইকে অবদান রাখার জন্য আহ্বান জানান সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া আরো বলেন, যেকোনো ধর্মীয় উৎসব সম্প্রদায়ের ভেদরেখা অতিক্রম করে মানুষে মানুষে মিলনের বাণী শোনায়, মানবসমাজের মধ্যে এক অনন্য ভ্রাতৃত্ববোধের জন্ম দেয়। আনন্দরূপ বিনম্রতায় সমাজে সবাইকে এক গভীর শুভেচ্ছাবোধে অনুপ্রাণিত করে।
কর্মসূচি
রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের হবে। মিছিলটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হয়ে পলাশী বাজার-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট-জাতীয় প্রেসক্লাব-পল্টন-শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার-গোলাপ শাহ্ মাজার-গুলিস্তান মোড়-নবাবপুর রোড-রায়সাহেব বাজার-বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।
রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের হবে। মিছিলটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হয়ে পলাশী বাজার-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট-জাতীয় প্রেসক্লাব-পল্টন-শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার-গোলাপ শাহ্ মাজার-গুলিস্তান মোড়-নবাবপুর রোড-রায়সাহেব বাজার-বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। আলোচনা সভার উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ শরন।
এদিকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি এবং ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল কুমার চ্যাটার্জি ও সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল আজ এক বিবৃতিতে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব স্তরের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন