Ads (728x90)


প্রতিদিন প্রযুক্তি বাজারে আসছে দারুন দারুন সব স্মার্টফোন। এমন একটা অবস্থা ব্যবহারকারীদের যে কোনটা রেখে কোনটা কিনবে! চোখ ধাঁধানো সব স্মার্টফোন গুলোতে থাকছে অত্যন্ত শক্তিশালী হার্ডওয়্যার যেগুলো ব্যবহারকারীদের এক্সপেরিয়েন্স আরও স্মুথ এবং উন্নত করছে। কিন্তু আজ নতুন টেকনোলজি নিয়ে লিখতে বসিনি আমি, লিখতে বসেছি পুরাতন ডিভাইস সম্পর্কে।
আমরা নতুন নতুন ডিভাইস কেনার পরে পুরাতন ডিভাইস গুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিক্রি করে দেই, আর খুব কম সংখ্যক মানুষ আছেন যারা ড্রয়ারে ফেলে রাখেন। কিন্তু আপনি যাই করুন না কেন সেটাই কিন্তু লসের পর্যায়ে পরে। কেন? ধরুন আপনার একটি স্মার্টফোন আছে যার র‍্যাম ৫১২ মেগাবাইট এবং প্রসেসর ডুয়াল কোর, কিনেছিলেন ছয় মাস আগে। আজকে যদি সেটা বিক্রি করতে যান তবে আপনি অর্ধেক দামও কিন্তু পাবেন না। তাই আমার মতে ইলেক্ট্রিক ডিভাইস, বিশেষ ভাবে মোবাইল বিক্রি করাটা লসের পর্যায়েই পরে। আবার আপনি যদি ফেলে রাখেন আপনার ডিভাইসটি তবুও আপনি ঠিক করছেন না কেননা আপনি একটি ভালো ডিভাইস অহেতুক ফেলে রাখছেন। আপনার প্রশ্ন জাগছে, তবে কি করা উচিৎ? খুব সহজ উত্তর দেই! আপনি অনেক ভাবেই আপনার সেই ফেলে রাখা পুরাতন ডিভাইসটি কিন্তু ইউটিলাইজ করতে পারেন। কীভাবে? চলুন, কিছু পদ্ধতি আমিই আপনাদের বলে দি।

১। মিডিয়া প্লেয়ার হিসেবে
আপনার যদি একটি অব্যবহৃত স্মার্টফোন ডিভাইস থেকে থাকে তবে আপনি ডিভাইসটিকে মিডিয়া প্লেয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু মিডিয়া প্লেয়ারের জন্য একটি ডিভাইসকে অনেক বেশি হাই-কনফিগারড হতে হয়না তাই বেশ পুরাতন স্মার্টফোনগুলোও কিন্তু এক্ষেত্রে চমৎকার মিডিয়া প্লেয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়াও, আপনি পুরাতন ডিভাইসটিতে মুভি দেখতে পারেন যাতে করে আপনার মূল স্মার্টফোনের চার্জ নিয়ে আপনাকে আর চিন্তিত হতে হবেনা। আর এভাবেই আপনি যদি একটি পুরাতন ডিভাইসকে মিডিয়া প্লেয়ারে রুপান্তরিত করেন তবে আপনার আর বাড়তি কোন মিডিয়া প্লেয়ারে ইনভেস্ট করতে হচ্ছেনা, তাইনা??
২। এক্সটার্নাল মেমরি ড্রাইভ হিসেবে
মিডিয়া প্লেয়ারের পাশাপাশি কিন্তু আপনি সহজেই একটি পুরাতন স্মার্টফোনকে রুপান্তরিত করতে পারেন একটি চমৎকার এক্সটার্নাল মেমরি ড্রাইভে। আমরা নানা রকম ডাটা বহনের জন্য সিডি, ডিভিডি, পেন ড্রাইভ বা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনি এই কাজে সবচাইতে স্মার্টলি কাজে লাগাতে পারেন একটি স্মার্টফোনকে। কেননা, একটি ৮ বা ১৬ গিগাবাইটের পুরাতন স্মার্টফোনে আপনি যেকোন ধরনের ফাইল সংরক্ষণ করতে পারবেন। এমনকি আপনি অন্যান্য এক্সটার্নাল মেমরি ড্রাইভে কোন কিছু রাখলে তা কম্পিউটার ছাড়া দেখতে বা এক্সেস না করতে পারলেও স্মার্টফোনকে যদি এক্সটার্নাল মেমরি ড্রাইভ হিসেবে ব্যবহার করেন তবে খুব সহজেই এর ভিতরে রাখা ফাইলগুলোকে যেকোন সময় এক্সেস করতে পারবেন। এজন্য চমৎকার কিছু অ্যাপলিকেশন রয়েছে ইন্টারনেটে, যেমন- সার্ভারস আলটিমেট, এফটিপি সার্ভার, ওয়েবডিএসি সার্ভার এবং ইত্যাদি।
৩। পোর্টেবল জিপিএস ম্যাপ হিসেবে
পুরাতন স্মার্টফোনগুলোকে চমৎকার ভাবে ব্যবহার করার আরও একটি মাধ্যম হচ্ছে এই ডিভাইসগুলোকে পোর্টেবল জিপিএস-এ রুপান্তরিত করা। একটি পোর্টেবল জিপিএস ডিভাইসে যদি আপনি আপনার পুরাতন স্মার্টফোনটিকে রুপান্তরিত করতে পারেন তবে আপনি আপনার গাড়ি, সাইকেল এবং এমনকি হাঁটার সময়েও ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্য শুধুমাত্র আপনার দরকার হবে Sygic, TomTom অথবা Here এর মত চমৎকার একটি অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করা যেগুলো ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই কাজ করতে সক্ষম। আর এছাড়া আপনার দরকার হবে এমন একটি কিছুর যা আপনি আপনার গাড়ি অথবা সাইকেলের সাথে লাগিয়ে স্মার্টফোনটি মাউন্ট করতে পারেন। এরজন্য আপনি বাজার থেকে অ্যাপ্রোপ্রিয়েট কিছু কিনতেও পারেন আবার নিজেই কিছু একটা তৈরি করতে পারেন, তেমন একটা কঠিন কাজ হবেনা সম্ভবত। তবে খেয়াল রাখবেন, যদি আপনি অফলাইনে কাজ করতে চান তবে ইন্টারনেট থাকা অবস্থায় সেই স্থানের ম্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে। নইলে কিন্তু অফলাইন অ্যাপ অফলাইনে ম্যাপ দেখাতে সক্ষম হবেনা।
৪। ইউনিভার্সাল রিমোট হিসেবে
আপনার যদি এমন একটি পুরাতন বা অব্যবহৃত স্মার্টফোন থাকে যার মধ্যে ইনফ্রারেড সেন্সর রয়েছে তবে আপনি খুব সহজেই সেই স্মার্টফোনটিকে আপনার টিভি বা ডিভিডির জন্য রিমোট কন্ট্রোলে পরিবর্তিত করতে পারবেন। এতে করে আপনার আর আপনার ছোট ভাইয়ের লুকিয়ে রাখা রিমোটটি খুঁজে বের করতে হবেনা বা রিমোট নষ্ট বা ব্যাটারি কমে গেলেও কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবেনা, কেননা আপনার স্মার্টফোনটিই এই কাজটি করতে পারবে খুবই চমৎকার এবং স্টাইলিশ ভাবে। আপনি IR 2.0 Universal Remote অ্যাপটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। চমৎকার একটি অ্যাপ। এছাড়াও PowerDVD Remote অ্যাপের মাধ্যমে আপনি আপনার ডিভিডি প্লেয়ারও কন্ট্রোল করতে পারবেন খুব সহজেই। মজার কথা হচ্ছে, এই অ্যাপলিকেশন গুলো আপনি ইন্টারনেটে বিনামূল্যেই পাবেন।
৫। বাসার জন্য বিনামূল্যে ফোন হিসেবে
অনেকেরই বাসায় আগে পিএবিএক্স বা টিঅ্যান্ডটি-এর লাইন থাকতো, মনে আছে? এখনও আছে। তবে এজন্য কিন্তু আমাদের মাসিক বিল দিতে হয়। তবে আপনার যদি থেকে থাকে একটি পুরাতন স্মার্টফোন এবং একটি ওয়াইফাই রাউটার তবে খুব সহজেই কিন্তু আপনি আপনার বাসার জন্য একটি ফোন ব্যবহার করতে পারছেন স্কাইপ, ভাইবার বা এরকম অ্যাপলিকেশন গুলো ব্যবহার করে। এতে করে আপনার বন্ধুদের সাথে যেমন আপনার যোগাযোগও থাকছে তেমন বাড়তি টাকাও খরচ হচ্ছেনা এবং অন্যদিক দিয়ে আপনার মূল ফোনের চার্জও শেষ হয়ে যাচ্ছেনা। কী ভাবছেন? অযথা ফোন ফেলে রেখে লাভ আছে? শুরু করে দিন না।
৬। ভিডিও গেম কনসোল হিসেবে
পুরাতন স্মার্টফোনগুলোর হার্ডওয়্যার খুব বেশি শক্তিশালী না হবার কারণে হয়তো এখনকার রিসোর্স হাংরি গেম গুলো রান করতে সক্ষম হবেনা তবুও কিন্তু আপনি ক্যান্ডি ক্রাশ, অ্যাঙ্গরি বার্ড গেম গুলো খেলতে পারবেন। এছাড়াও আপনি ইচ্ছা করলে পিএসপি বা নিনটেন্ডো ডিএস না কিনে খুব সহজ ভাবে আপনার মোবাইলে ছোট ছোট গেমগুলো খেলে আনন্দ পেতে পারেন।
এছাড়াও, আপনি কিন্তু ইচ্ছা করলে পিএসপি এবং নিনটেন্ডো ডিএস এর গেমগুলোও বিভিন্ন রকম ইমুলেটরের মাধ্যমে আপনার পুরাতন স্মার্টফোনে খেলতে পারবেন। ছোটবেলায় খেলা ক্যাডিলাক এবং ডায়নোসরের কথা মনে আছে আপনার? আমাদের দেশে লোকাল গেমসের দোকান গুলোতে অবশ্য এই গেমটি ‘মোস্তফা’ নামেই বেশি পরিচিত। আপনি ইচ্ছা করলেই ২৫৬ মেগাবাইট র‍্যামের স্মার্টফোনেও এই গেমটি ইমুলেটরের মাধ্যমে খেলতে পারবেন।
৭। স্মার্ট ঘড়ি হিসেবে
হয়তো ভাবছেন খেয়েদেয়ে আর কাজ নেই! স্মার্টফোনকে ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হবে খুবই হাস্যকর? কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, একটি স্মার্টফোন সেটা যতই পুরাতন হোক না কেন এবং এর স্পেসিফিকেশন যতই কম হোক না কেন, অবশ্যই এটিকে স্মার্ট ঘড়িতে রুপান্তরিত করলে এটি চমৎকার কাজ করতে সক্ষম হবে, তাই না? আপনি আপনার পুরাতন স্মার্টফোনটিকে শুধু একটি ডিজিটাল ঘড়িই নয়, বরং একটি অ্যালার্ম ক্লক এবং ক্যালেন্ডারেও পরিবর্তন করতে পারবেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মূল ডিভাইস গুলোতে রিমাইন্ডার সুবিধা থাকলেও কিন্তু ব্যাটারি সংরক্ষণে বা রিসোর্স সংরক্ষণের জন্য আমরা খুব একটা ক্যালেন্ডার এন্ট্রি করিনা বা রিমাইন্ডার দিইনা, তাই যদি আলাদা একটি ডিভাইসে আমরা আমাদের সকল ইম্পর্টেন্ট এন্ট্রি গুলো ক্যালেন্ডারে টুকে রাখি তবে আমাদের কি খুবই কাজে লাগবে না?
এছাড়াও আপনি স্মার্ট ঘড়ির পাশাপাশি টু-ডু লিস্টের ডিজিটাল ভার্সন হিসেবেও আপনার পুরাতন ডিভাইসটিকে ব্যবহার করতে পারবেন। যাই হোক, ইন্টারনেটে ঘড়ির জন্য রয়েছে চমৎকার কিছু অ্যাপলিকেশন। এর মধ্যে টাইমলি অ্যালার্ম ক্লক, অ্যালার্ম ক্লক এবং অ্যালার্ম ক্লক বাই টুইস্ট অ্যাপ গুলো খুবই চমৎকার কাজ করে থাকে।
৮। ইন্সট্রুমেন্ট টিউন করার জন্য
আপনার যদি একটি ইন্সট্রুমেন্ট থেকে থাকে, ধরুন - গিটার থেকে থাকে তবে পারফেক্ট সুরের জন্য পারফেক্ট ভাবে টিউন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি খেয়াল করেছেন টিউনার অ্যাপটি দিয়ে কত সহজে গিটারের পারফেক্ট টিউন করা যায়? জানতেন না? এখনি চেষ্টা করে দেখুন।
শেষ কথাঃ
দেখলেন! ফেলে রাখা অব্যবহৃত পুরাতন স্মার্টফোনটি দিয়ে কত কিছু করা সম্ভব! আমরা আসলে পুরাতন প্রোডাক্টগুলোকে ভালো ভাবে রিসাইকেল বা পুনরায় ইউটিলাইজ করতে পারিনা। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশ গুলো প্রায় সব ধরনের প্রোডাক্টের সর্বোচ্চ ইউটিলাইজ করে আর এটাও কিন্তু তাদের উন্নতির একটা কারণ। যাই হোক, আমার মাথায় যেগুলো এসেছে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আমি নিশ্চিত, আপনার মাথায়ও কিছু আইডিয়া আসবে। আর আসলেই শেয়ার করে ফেলবেন কিন্তু। অপেক্ষায় থাকলাম, ভালো থাকুন!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন