ঢাকা: গারো তরুণী ধর্ষণকারী আশরাফ ওরফে তুষার পেশায় একজন প্রাইভেট ড্রাইভার। ১৭ মে গারো তরুণীকে সে প্রথম দেখে। সেদিন আফ্রিকান দুই নারী পর্যটককে নিয়ে কেনাকাটার জন্য গিয়েছিলো যমুনা ফিউচার পার্কের দ্বিতীয় তলার টেক্সমার্ট ফ্যাশন হাউজে। কেনাকাটার এক পর্যায়ে পরিচয় হয় গারো তরুণীর সঙ্গে। এরপর কয়েকদিনে তার সঙ্গে ফোনে কথাও হয় গারো তরুণীর। এই ফাঁকে সহযোগী জাহিদুল ইসলাম লাভলু ও ফিরোজকে নিয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা করতে থাকে তুষার। পরিকল্পনায় তিনজন থাকলেও ধর্ষণে অংশ নেয় দুইজন- তুষার ও লাভলু।
রাজধানীতে চলন্ত মাইক্রোবাসে গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক তুষার ও লাভলুকে গ্রেপ্তারের পর উত্তরায় র্যাবের সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সামনে তুষার এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেয়।
বুধবার দুপুরে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন র্যাবের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার পটুয়াখালির কলাপাড়া থেকে রাত ১টার দিকে তুষারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১। এরপর তুষারের তথ্যমতে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গুলশান-১ থেকে গ্রেপ্তার করে অপর ধর্ষক লাভলুকে। সেও পেশায় গাড়ি চালক। ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও আটক করেছে র্যাব। বনানী ২১ নম্বর রোডের ৬০/বি নম্বর বাড়ি থেকে ঢাকামেট্রো-চ ১৫-৪৭০১ মাইক্রোটি উদ্ধার করা হয়।
তুষার জানায়, তিন বছর ধরে সে সিগনেট বাইং হাউজে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছে। গত ১৭ মে সে দুইজন আফ্রিকান নারীকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কের দ্বিতীয় তলায় টেক্সমার্ট ফ্যাশন হাইজে কেনাকেটার জন্য যায়। সেখানে গারো তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে কয়েকবার ফোনে কর্থাবার্তা হয়।
তুষার জানায়, পরদিন ১৮ মে তুষারের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে গারো তরুণী তাকে জানায়, তার একটি চাকরি প্রয়োজন, তিনি বাইং হাউজে চাকরি করতে চান। তুষার তাকে একটি সিভি( জীবনবৃত্তান্ত) দিতে বলে। এরমধ্যে তুষারের কাছে গারো তরুণী ১০ হাজার টাকা ধারও চায় বলে জানায় তুষার। তুষারের দাবি তরুণীকে সে ৮ হাজার টাকা ধার দেয়। এদিকে তুষার তরুণীকে সিভি সনিয়ে ২১ মে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দেখা করতে বলে। রাত পৌনে ৯টা থেকে তুষার এবং সহযোগী লাভলু যমুনা ফিউচার পার্কে বিপরীত দিকে একটি রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করতে থাকে। রাত ৯টা ১০ মিনিটে তরুণীটি আসে এবং তুষারের হাতে সিভি দেয়। তখন তুষার ও লাভলু মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে রেস্টুরেন্টের নিচে রাখা মাইক্রোবাসটির পাশে এসে তরুণীকে উত্তরায় জসীম উদ্দিন রোডে তার বাড়ির কাছে গাড়ি করে নামিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। তরুণী রাজী না হলে জোর করে টান দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নেয় তুষার। ততক্ষণে চালকের আসনে বসা লাভলু গাড়ি চালাতে থাকে। এর মধ্যে পেছনের সিটে বসা তুষার তরুণীর উপর হামলে পড়ে এবং ধর্ষণ করে। ওই সময় তরুণী গাড়ির ভেতরে চিৎকার করতে থাকে এবং কাঁদতে থাকে। গাড়িটি এয়ারপোর্ট রোডের তিনশফুট এলাকায় এসে পৌঁছুলে চালকের আসন থেকে পেছনে এসে বসে লাভলু একই কায়দায় ধর্ষণ করে তখন গাড়ি চালাতে থাকে তুষার। এভাবে তারা কুড়িল ফ্লাইওভার এয়ারপোর্ট রোড হয়ে জসীম উদ্দিন রোড পর্যন্ত তরুণীকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা উত্তরার জসীম উদ্দিন রোডে তাকে নামিয়ে দেয়।
তুষার জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের সঙ্গে ফিরোজ নামের অপর ড্রাইভার পরিকল্পনায় ছিল কিন্তু ঘটনার সময় ছিল না।
সাংবাদিকরা জানতে চায়, ঘটনা যদি দুই জনের দ্বারা সংঘঠিত হয় তাহলে তরুণী ৫জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো কেন। জবাবে ধর্ষিত তরুণীর বরাত দিয়ে র্যাব জানিয়েছে, ঘটনার পর এক মামার পরামর্শে তরুণী ৫ জনের নামে অভিযোগ করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন