Ads (728x90)

--

শরণার্থী সংকট নিয়ে এখনও কোন অভিন্ন সমাধান ও কর্মপরিকল্পনা বের করতে পারেনি ইউরোপ। হাঙ্গেরির শরণার্থী শিবিরে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা। এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার আহ্বান, ২ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর। অভিবাসন সংকট সমাধানে পৃথক পরিকল্পনা থেকে সরে এসে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের। সংস্থাটি বলছে, অভিন্ন ও সামগ্রিক পরিকল্পনা ও কৌশলের মাধ্যমে শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করতে হবে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। বর্তমান সংকটকে ‘গুরুতর’ আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান এন্টিনিও গুটেরেস বলেছেন, ইউরোপকে সর্বশক্তি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

তার অভিযোগ, ইইউর বর্তমান নীতি ‘অসম ও ত্রুটিপূর্ণ’। এর ফলে কেবল মানব পাচারকারীরাই লাভবান হচ্ছে। তার আহ্বান, ইউরোপের উচিত অন্তত ২ লাখ অভিবাসীকে গ্রহণ করা। এ পুরো প্রক্রিয়ায় অংশ থাকতে হবে সব দেশেরই। বর্তমানে ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে হাজার হাজার আশ্রয়প্রত্যাশী অবস্থান করছে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। এ দেশটি দিয়ে যাওয়া যায় ইউরোপের বিভিন্ন উন্নত দেশে। সার্বিয়ার সঙ্গে হাঙ্গেরি সীমান্তের কাছে একটি শিবির থেকে বেরিয়ে গেছে ৩০০ মানুষ। ফলে সার্বিয়ার সঙ্গে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে হাঙ্গেরি। ইউরোপগামী একটি ট্রেনে উঠে বসে আছে শ’ শ’ শরণার্থী। তারা আর আশ্রয়শিবিরে ফিরে যেতে চায় না। অন্য আশ্রয় শিবিরগুলোতে বিরাজ করছে ব্যাপক বিশৃঙ্খল অবস্থা।
কয়েকজন শরণার্থীর অভিযোগ, জার্মানি যাওয়ার জন্য নিজেদের অর্থে টিকিট কেটেছেন তারা। তাদের প্রশ্ন, কর্তৃপক্ষ যদি আমাদেরকে থামাতেই চায় তাহলে টিকিট কিনতে দিলো কেন? হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের একটি রেল স্টেশনে অবস্থান নেয়া শরণার্থীদের আরও একটি দল অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যেতে চাইলে কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। কিন্তু তবুও তারা এখন হেঁটে রওনা দেবে অস্ট্রিয়ার দিকে। এই সংকট যতই তীব্র হচ্ছে, শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য ইউরোপের ওপর চাপ ততোই বাড়ছে। বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই মহাদেশকে এতো বড় শরণার্থী সমস্যায় আর কখনই পড়তে হয়নি। এদিকে হাঙ্গেরিয়ান পার্লামেন্ট আরও কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুমোদন করেছে। যেসব অভিবাসী জার্মানিতে যেতে চাইবেন, তাদের জরিমানা করার বিধানও এ নীতিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলমান অভিবাসন-প্রত্যাশীকে তার দেশে অনুপ্রবেশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ব্রাসেলসের অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরের বাইরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, আমাদের দেশে বহু সংখ্যক মুসলমান আমরা চাই না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আমাদের আছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা। ইউরোপে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়া অভিবাসন-প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দয়া করে আসবেন না। এখানে আসাটা ঝুঁকিপূর্ণ। আপনাদের গ্রহণ করা হবে, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি না। গতকাল তিনি গোটা পরিস্থিতিকে ‘জার্মানির সমস্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, কারণ অভিবাসীরা জার্মানিতে যেতেই বেশি আগ্রহী।
লুক্সেমবার্গের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন এসেলবর্ন তার সমালোচনা করে বলেন, এ প্রধানমন্ত্রীর জন্য যে কারও লজ্জিত হওয়া উচিত। পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির নেতারা প্রাগে এক জরুরি বৈঠকে বসেছেন। ব্রাসেলসে বৈঠকে মিলিত হবেন ইইউভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এদিকে আগে অস্বীকৃতি জানালেও, অব্যাহত চাপের মুখে আরও ‘হাজার হাজার’ সিরিয়ান অভিবাসীকে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, অন্তত ১ লাখ শরণার্থীকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বণ্টন করে দেয়া উচিত। এর আগে ডোনাল্ড টাস্ক ৪০ হাজার শরণার্থীকে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ইইউভুক্ত দেশে শরণার্থীদের বণ্টন করার জন্য একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন