ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় গত তিন মাসে দেশের ১১
জেলায় ৬৩৬ কোটি ৮২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারি এক
পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তৈরি করা এ
প্রতিবেদনে গবাদি পশু-পাখি, ফসল, লবণের জমি, চিংড়িসহ মৎস্য খামার, বন,
বৈদ্যুতিক ও টেলিযোগাযোগ স্থাপনা, শিল্প-কারখানা, নৌযান ও মাছ ধরার জালের
ক্ষয়ক্ষতির ওপর ভিত্তি করে এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয়
প্রতিষ্ঠান, বাঁধ ও সড়ক, নলকূপের ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিসংখ্যান
দেওয়া হলেও এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে গত
জুন মাসের মাঝামাঝি ও শেষদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্য দেখা দিয়েছে।
একইসঙ্গে ৩০ জুলাই উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঘুর্ণিঝড় ‘কোমেন’। গত
কয়েকদিনের অতিবৃষ্টিতে দেশের উত্তর, মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন
জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক
মো. রিয়াজ আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা থেকে তথ্য নিয়ে গত
জুন থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিয়ে
একটি পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। এটি বৃহস্পতিবার অতিবৃষ্টিপাতে সৃষ্ট
বন্যা, জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় গৃহীত কার্যক্রম ও করণীয়
পর্যালোচনার জন্য গঠিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস জাতীয় প্ল্যাটফরমের সভায়
উপস্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন দেশের ২৪ জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এ বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পেতে আমাদের আরও সময় লাগবে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ক্ষতিগস্ত
জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে— চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা,
বান্দরবান, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নওগাঁ।
হিসাব অনুযায়ী বন্যায় মোট ২৩ জন মারা
গেছেন, আহত হয়েছেন ৯০৪ জন। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা ১০ লাখ ৭৩ হাজার
৫০৯ জন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত লোক ২৩ লাখ ১১ হাজার ৩৬৭ জন।
বন্যায় ৯৩ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৫১ কোটি ৯১ লাখ ৬১ হাজার ৯০৫ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
১১ জেলায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ২৯ হাজার ৫৮০ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ ৬১ হাজার ৩৬৮টি।
মোট চার হাজার ৬৫৭টি গবাদি পশু
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মূল্য চার কোটি ৮৯ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত হাঁস-মুরগী এক লাখ নয় হাজার ৫৯৩টি। এর মূল্য ধরা হয়েছে দুই
কোটি ৫৬ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৬ টাকা।
বন্যায় লবণচাষীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫৬ হেক্টর জমির এক লাখ ১২ হাজার টাকার লবণের ক্ষতি হয়েছে।
৬০ হাজার ২৭ হেক্টর চিংড়ি চাষের জমি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১৭ কোটি ৮৩
লাখ ৩৫ হাজার ৮২০ টাকা। ২১ হাজার ৯৬২টি মৎস্য খামার পানিতে ভেসে যাওয়ায় ৪১
কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
সংখ্যা ১৬১টি, এক হাজার ৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাঁচটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে, ৬৬৯টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে।
এক হাজার ৯৮৫ কিলোমিটার পাকা ও ছয় হাজার
২৮০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪৮ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ও
৩২৬ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫টি ব্রিজ ও কালভার্ট
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বনভূমির পরিমাণ ২৯২ হেক্টর। এতে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রায় ১২ কিলোমিটার বিদ্যুৎ স্থাপনার ৮৯
লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হয়েছে ১৮ লাখ
টাকা। ১০টি শিল্প-কারখানার ক্ষতির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ৩ লাখ
টাকা।
চার হাজার ১৬২টি গভীর, ছয় হাজার ৭৬১টি অগভীর ও দুই হাজার ৯৭১টি হস্তচালিত নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৪২৮টি নৌকা ও ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মূল্য ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার। এক হাজার ৪৯৭টি মাছ ধরার
জালের ক্ষতি ২ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক
বলেন, জাতীয় প্ল্যাটফরমের সভায় বন্যায় কৃষক ও মৎস্যচাষীদের ক্ষতি পুষিয়ে
দিতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য কৃষি ও মৎস্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। তারাও বলেছে
এ বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা আছে।
তিনি জানান, বন্যার পর পানিবাহিত রোগের
বিস্তার রোধে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা
হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা দুর্গত এলাকায় সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে স্থানীয়
সরকারকে বলা হয়েছে।
রিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, ‘কক্সবাজারসহ
বিভিন্ন জেলায় বিশেষ ত্রাণ সহায়তা দেওয়াসহ বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য আমাদের
দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন