সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন বরখাস্ত হওয়া মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে রবিবার বেলা ১১টায় তার এমপি পদে থাকার বৈধতা নিয়ে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘শুনানিতে আমি বলেছি যে, সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছি। তাই শুনানির আর দরকার নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি অবগত হয়েছি, আমার নেত্রী চান না, পদ নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি করি। সংসদ সদস্য পদ কার কাছে কতটা মূল্যবান আমি জানি না। তবে আমার কাছে মূল্যবান হল জনগণের ভালবাসা ও নেত্রীর আস্থা এবং আনুগত্য। তাই আমি কমিশনকে বলেছি, এ মামলায় আমি লড়তে চাই না। এ শুনানি মুলতবি করা হোক। আমি আমার পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেব। সংসদ সদস্য পদ নিয়ে লড়বার মতো দুর্বল মানসিকতা আমার নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি একজন সাচ্ছা মুসলমান। আমার ইমানে এতটুকুও দুর্বলতা নেই, যা প্রচার হয়েছে তা মিথ্যা প্রচার হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুনানিকালে তিনি আমাদের কাছে জানিয়েছেন যে, তার সদস্য পদ নিয়ে যে সমস্যা ওটা নিজেই সমাধান করবেন। তিনি পদত্যাগ করবেন।’
‘তিনি আমাদের কাছে লিখিতভাবে কমিশনের কাছে সময় চেয়েছেন। আমরা তাকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি, এর মধ্যে পদত্যাগ করেছে মর্মে চিঠি পেলে ওই দিন পরবর্তী ব্যবস্থা নেব’- যোগ করেন নির্বাচন কমিশনার।
নিয়ম অনুযায়ী, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য কোনো সংসদ সদস্য যদি স্পিকারের কাছে আবেদন করেন, স্পিকার তা গ্রহণ করে আসনটি শূন্য ঘোষণার ব্যবস্থা করে। আসন শূন্য হলে ইসি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে।
দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয় আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার এমপি পদ বাতিলের জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে আবেদন করেছি। আইন অনুযায়ী সংসদে তার সদস্য পদ থাকার কথা না।’
গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী থাকাকালীন এক অনুষ্ঠানে হযরত মোহাম্মদসহ (সা.) পবিত্র হজ ও তাবলীগ-জামাত নিয়ে বির্তকিত মন্তব্য করেন প্রবীণ রাজনীতিক লতিফ সিদ্দিকী। এরপর বিএনপিসহ ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে দল ও মন্ত্রিপরিষদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর তার সংসদ পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে গত ১৩ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিনকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পরে ১৬ জুলাই ইসি লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান ও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়। একই দিন সিদ্দিকীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেও চিঠি দেওয়া হয়।
গত ২ আগস্ট আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের কেউ নন দাবি করে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করতে ইসিকে চিঠি দেয় দলটির সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। একই দিন লতিফ সিদ্দিকী তার অবস্থান তুলে ধরে ইসিতে চিঠি পাঠান। পরে ইসি ২৩ আগস্ট দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার দিন ধার্য করে।
এদিকে গত ২০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের শুনানির এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে লতিফ সিদ্দিকীর করা রিট আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার আদালতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের নোটিশ স্থগিতের আবেদন করেন লতিফের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রবিবার (২৩ আগস্ট) সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের ওই আদেশ বহাল রাখেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন