ফিক্সড ফোনসেবা সম্প্রসারণে অপারেটরদের আধুনিকায়ন, ব্যবসাবান্ধব ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর অংশ হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইপি ফোনসহ ত্রিমুখী সেবা প্রদানের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে কমিশনের নেয়া সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বন্ধ ফিক্সড ফোন অপারেটরদের লাইসেন্স ও তরঙ্গ বিষয়ক জটিলতা নিরসনের পর। বিটিআরসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ফিক্সড ফোনসেবার সম্প্রসারণে বিদ্যমান পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) নীতিমালাটি সংশোধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। সংশোধিত নীতিমালায় ফিক্সড ফোন অপারেটরদের এনজিএনভিত্তিক ত্রিমুখী সেবাদানের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে একই সংযোগের মাধ্যমে ভয়েস কল, ইন্টারনেট সেবা ও আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) টিভি সেবা পাবেন গ্রাহক।
সেলফোন সেবার কারণে ফিক্সড ফোনের ব্যবহার কমে আসছে। তবু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো জনপ্রিয় পিএসটিএন অপারেটরদের সেবা। মূলত কম খরচে ভয়েস কল করার সুবিধা ও ডাটা কানেকটিভিটি সেবার মাধ্যমে এ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে তারা। পাশাপাশি পিএসটিএনের মাধ্যমে পিসিও সুবিধাও দেয়া হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় ফিক্সড ফোন সেবার গ্রাহক ঘনত্ব ১০ শতাংশের বেশি।
এ বিষয়ে বেসরকারি খাতে দেশের শীর্ষ পিএসটিএন অপারেটর র্যাংগসটেলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এ কে শামসুদ্দিন জানান, দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের অন্য সেবাগুলোর ক্ষেত্রে যে ধরনের উন্নয়ন ঘটেছে, সে অনুপাতে ফিক্সড ফোনের উন্নয়ন হয়নি। এ খাতের উন্নয়নে নেয়া উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আগামীতে ফিক্সড ফোনের গ্রাহকদের বহুমাত্রিক সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এজন্য খাতটিতে আরো বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশে সেলফোনের পাশাপাশি ফিক্সড ফোনসেবায় প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নত সেবা দিতে পিএসটিএন লাইসেন্স দেয়া হয়। এর আগে দেশের একমাত্র ফিক্সড ফোন অপারেটর ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। ২০০৪ সালে ফিক্সড ফোনসেবায় বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অঞ্চলভিত্তিক পিএসটিএন অপারেটর হিসেবে সেবা পরিচালনার অনুমতি দেয় বিটিআরসি। পরে ২০০৭ সালের শেষ দিকে দেশব্যাপী পিএসটিএন সেবার লাইসেন্স দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
২০১০ সালের মার্চে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া হয় পাঁচ পিএসটিএন কোম্পানির সেবা। এর মধ্যে আবারো কার্যক্রম চালু করেছে র্যাংগসটেল এবং ওয়ার্ল্ডটেল। বন্ধ থাকা অন্য অপারেটরদের লাইসেন্স ও বরাদ্দ দেয়া তরঙ্গ বরাদ্দ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটিও গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
বিটিআরসি সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে পিএসটিএন সেবার গ্রাহক প্রায় ১১ লাখ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলের গ্রাহক ৭ লাখ ৮৫ হাজার। এছাড়া বেসরকারি পিএসটিএনগুলোর মধ্যে র্যাংগসটেলের ২ লাখ ৬৬ হাজার, ওয়ার্ল্ডটেলের ১৪ হাজার ও বাংলাফোনের ৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন